আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জকে পিছনে ফেলে নতুন রাজধানী হিসেবে আবির্ভাব হয়েছে নওগাঁর। বর্তমানে দেশের মোট উৎপাদিত আমের সিংহভাগই আসে নওগাঁ থেকে যা এতোদিন ছিল রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের দখলে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সারাদেশে মোট আমের উৎপাদন ছিলো প্রায় ২৩ লাখ ৭২ হাজার টনের কিছু বেশি। এর মধ্য শুধুমাত্র নওগাঁ থেকে আসে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৮৬ টন আম। যেখানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এসেছে ২ লাখ ৭৫ হাজার টন এবং রাজশাহী থেকে এসেছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ টন। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরেও নওগাঁতে আমের মোট উৎপাদন ছিলো ১ লাখ ৬১ হাজার ৯১০ টন। সুতরাং ভাবতেই পারছেন , আম উৎপাদনে নওগাঁ জেলা ঠিক কতটা এগিয়ে।
গত সাত বছরের যেখানে নওগাঁয় মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। সেখানে বর্তমানে জেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান গড়ে উঠেছে। স্থানীয় ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এক ফসলি জমিতে ধানসহ অন্যান্যে ফসল চাষের চেয়ে আম চাষে লাভজনক হওয়ায় আগামীতে নওগাঁয় আম চাষে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। জেলায় গুটি, ল্যাংরা, ফজলি, ক্ষিরসাপতি, মোহনভোগ, আশ্বিনা, গোপালভোগ, হাঁড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, বারি-৩, ৪ ও ১১, নাগফজলি, গৌড়মতি উন্নত জাতের আম চাষ হচ্ছে। এ ছাড়াও দেশীয় বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হয়ে থাকে। এ সকল আমের বিশেষ জাতের মধ্যে আম ‘নাগফজলি’। এই নাগফজলি বিশেষ করে পত্নীতলা, বদলগাছী, ধামইরহাট ও মহাদেবপুরে চাষ হয়ে থাকে। এই আম প্রথমে ১৪/১৫ বছর আগে বদলগাছীতে চাষ শুরু হলেও বর্তমানে পত্নীতলায় বেশি চাষ হয়ে থাকে।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের থেকে জানা গেছে, নওগাঁ জেলার পোরশা, সাপাহার, বদলগাছী, পত্নীতলা, মান্দা, ধামইরহাট, বরেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে পানির স্তর মাটির অনেক নিচে হওয়ায় বছরের বেশি সময় ধরে জমি পতিত থাকে। আমন ধান ছাড়া ইরি-বোরো ধান চাষ হয় না। বর্ষ মৌসুমে ঠাঠা এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে শুধু মাত্র আমন ধান চাষ হয়ে থাকে। ধানের চেয়ে আম চাষে বেশি লাভ নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে ঠাঠা বরেন্দ্রভূমির এ সব অঞ্চলে দিনদিন শতশত বিঘা জমিতে উন্নত (হাইব্রিড) জাতের আম বাগান গড়ে উঠছে। গত সাত বছর আগে জেলা মাত্র ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হতো। এ বছর জেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। নওগাঁর আম সুস্বাদু হওয়ায় গত দু’বছর থেকে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা আহসান হাবিব খাঁন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলার মধ্যে নওগাঁয় আমের যে ভাবে বাগান গড়ে উঠছে তা বলাবাহুল্য। মাটির কারণে স্বাদেগুণে নওগাঁর আমের তুলনা চলে না। বর্ষ মৌসুম ছাড়া আর কোন সময় ফসল হয় না এমন জমিকে এক ফসলি জমি বলা হয়ে থাকে। এক ফসলি রয়েছে এমন উপজেলা নওগাঁর পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুরে সরকারের নির্দেশে স্বল্প সেচ চাহিদা সম্পন্ন ফসল উৎপাদন করা। এর মধ্যে সবচেয়ে আম চাষে লাভ হওয়ায় কৃষকদের আম চাষে উদ্বুত্ত করা হচ্ছে।


0 comments:
Post a Comment